আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (2024)

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (1)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

আপনি হয়তো জীবনেও ক্যাথি ক্লেইনার রুবিনের নাম শোনেননি। কিন্তু তাকে খুন করার চেষ্টা করা লোকটির নাম আপনি শুনে থাকতে পারেন।

ক্যাথি বিশ্বে টেড বান্ডির কবল থেকে বেঁচে ফিরে আসা একজন হিসেবে পরিচিত।

তবে ক্যাথি মৃত্যুর প্রায় কাছাকাছি যান মাত্র ১২ বছর বয়সে। সেই সময়ে তার 'লুপাস' নামক রোগের চিকিৎসা চলছিল। এমনকি, তখন কেমোথেরাপি চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে।

লুপাস এক ধরনের রোগ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়ে সুস্থ মাংসপেশীকে আক্রমণ করে। এটিকে সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায় না; বড়জোর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তার রোগমুক্তির পরের কথা। তখন ১৯৭৮ সাল, ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ক্যাথি তার জীবনকে ভালোই উপভোগ করছিলেন। কিন্তু এক রাতে তার ডর্মে (থাকার জায়গা) একজন আগন্তুক প্রবেশ করে এবং সেই অচেনা লোকটিই আমেরিকার ভয়ানক সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি।

এরপর অপ্রত্যাশিতভাবে অতর্কিতে হামলা শুরু হয়, যাতে ক্যাথির ডর্মের দু'জন বাসিন্দা নিহত হন। সেইসাথে, ক্যাথি ও তার রুমমেট বা তার সঙ্গে একই ঘরে বসবাসকারীও গুরুতর আহত হন।

এই ট্র্যাজেডির পর ক্যাথি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বিষয়ে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। সেজন্য ৩৭ বছর না হওয়া অবধি তার ছেলেও জানতেন না যে, তার মা বান্ডির আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।

এমিলি লে বিউ লুচেসি’র সাথে ক্যাথি তার জীবন সম্বন্ধে একটা বই লিখেছিলেন। বইয়ের নাম ‘আ লাইট ইন দ্য ডার্ক: সার্ভাইভিং মোর দ্যান টেড বান্ডি’।

এই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের আউটলুক প্রোগ্রামের সাথে কথা বলেছিলেন।

আরো পড়তে পারেন:
  • বগুড়ায় বালতির হাতল দিয়ে জেলের ছাদ ফুটো করে যেভাবে পালায় ফাঁসির আসামিরা

  • ভক্তকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার দক্ষিণ ভারতের যে সুপারস্টার

  • সেই মোস্ট ওয়ান্টেডকে যেভাবে খুঁজে বের করেন বিবিসি সাংবাদিক

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (2)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

আনন্দমুখর শৈশব থেকে রহস্যজনক অসুস্থতা

আমেরিকান বাবা ও কিউবান মায়ের ঘরে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন জন্মগ্রহণ করেন।

একটা দুর্দান্ত পারিবারিক পরিবেশে, অনেক ভাই-বোনের মাঝে ক্যাথির বেড়ে ওঠা। কিন্তু যখন তার পাঁচ বছর বয়স, তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে (হৃদ রোগ) মারা যান।

যদিও তার মা পরে একজন জার্মান বংশোদ্ভুত লোককে বিয়ে করেছিলেন, যার সাথে ক্যাথির সুসম্পর্ক ছিল। “সে ছিল দুর্দান্ত! তিনি সেরা বাবা। আমি তাকে সৎ বাবা নয়, বাবা বলেই ডাকতাম।”

ক্যাথির মা ছিলেন খুব কঠোর। তার বাবা’র জীবনেও তার মায়ের বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার মা ক্যাথি ও তার ভাই-বোনদেরকে অনেককিছু করতে মানা করতেন এবং তাদেরকে সেটা অবশ্যই মেনে চলতে হতো। যেমন- দেরী করে বাড়ি ফেরা।

ক্যাথি ১২ বছর বয়সে হঠাৎ করে রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

“এটা ছিল ষষ্ঠ শ্রেনির শেষের দিক এবং আমি খুব অলস ও ক্লান্ত বোধ করছিলাম। কিছু করতে চাইছিলাম না আমি।”

স্কুল শেষে ক্যাথি বাড়ি ফিরে জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতেন। একজন শিশু বিশেষজ্ঞ তখন তাকে মিয়ামি শিশু হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। ক্যাথিকে সেখানে তিন মাস থাকতে হয়। কিন্তু তারপরও চিকিৎসকরা তার রোগ খুঁজে বের করতে পারেননি।

তারা বুঝতে পারছিলেন যে, কিছু একটা ক্যাথির শরীরকে আক্রমণ করছে। কিন্তু এটা তারা জানতেন না যে ক্যাথিকে তারা ঠিক কীভাবে সারিয়ে তুলবেন। তারা তখন ক্যাথিকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। কারণ তারা জানতেন না ক্যাথি এভাবে কতদিন বেঁচে থাকবেন।

ক্যাথি আসলে 'লুপাস' নামক একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু তখন এর চিকিৎসা ছিল অনেকটা পরীক্ষামূলক। তার চিকিৎসকরা কেমোথেরাপি চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু মাত্র ১২ বছর বয়সী কিশোরীর ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা বেশ কঠিন ছিল।

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (3)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

নিঃসঙ্গ সময়

“আমার চুল পড়ে যেতে শুরু করে, সব চুল.. এবং আমি টাক হয়ে গেলাম,” তিনি বলেন।

ক্যাথি তখন সপ্তম শ্রেণিতে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে সারাক্ষণ বাড়িতেই বন্দী থাকতে হতো তাকে। শুধুমাত্র জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অন্য বাচ্চাদের খেলা দেখতে পারতেন তখন।

ক্যাথি এত বেশি একাকী অনুভব করতেন যে কখনও কখনও তিনি শূন্য চেপে ফোন কোম্পানিকে কল দিতেন শুধুমাত্র অপর প্রান্ত থেকে কারও কণ্ঠ শোনার জন্য।

প্রচুর সময় বিছানায় কাটাতে হতো তাকে, কিন্তু ক্যাথি হাল ছেড়ে দিতে চাননি। বাবা-মা বাড়িতে আসার আগেই ভালো পোশাক পরতেন, টেলিভিশন দেখার জন্য নীচে লিভিং রুমে নেমে আসতেন এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকার ভান করতেন।

বছর শেষে সুস্থ হওয়া শুরু করলে চিকিৎসকরাও তাকে স্বাভাবিক রুটিনে ফিরিয়ে আনতে শুরু করলেন।

তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন এবং লুপাসকে পেছনে ফেলে আসতে শুরু করেছিলেন কারণ তিনি এই রোগের সঙ্গে মানসিকভাবে বসবাস করছিলেন না। সময়টা তখন স্কুলে ফিরে যাওয়ার, একজন কিশোরী হয়ে ওঠার ও কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকার।

আরো পড়তে পারেন:
  • 'শয়তানের নিঃশ্বাস' নামের যে ড্রাগ বাংলাদেশে অভিনব প্রতারণায় ব্যবহার হচ্ছে

  • গাংচিল, ম্যাক্স পলু, বাট্টু বাহিনীদের থামানো যাচ্ছে না কেন?

  • বিখ্যাত পরিবারের ছেলে মুখতার আনসারি যেভাবে গ্যাংস্টার হয়ে ওঠেন

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (4)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন

হাই স্কুল শেষ করে ক্যাথি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে (এফএসইউ) পড়তে যেতে চাইলেন। মিয়ামি থেকে দূরে হওয়া সত্ত্বেও তিনি এটাকেই বেছে নিলেন। কারণ ওখানকার বাসিন্দা হওয়ার জন্য তার লেখাপড়ায় ছাড় পাওয়ার সুযোগ ছিল। সেইসাথে, তার এই সিদ্ধান্ত তাকে তার মায়ের বেড়াজাল থেকে দূরে সরতেও সহযোগিতা করে।

“কিছুটা লেখাপড়া করার পাশাপাশি আমি পার্টিতে যেতে চেয়েছিলাম, নতুন বন্ধু বানাতে চেয়েছিলাম। অর্থাৎ, কলেজে যাওয়ার সময় একজন শিক্ষার্থী যা যা করে, তা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম।”

এফএসইউ’র প্রথম বর্ষ দুর্দান্ত কাটে ক্যাথির এবং কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান পাওয়ায় খুব আনন্দিত ছিলেন তিনি। এই নারী সংগঠনের সদস্যদের সবাই এক ছাদের নীচে বসে যৌথভাবে নানা কার্যক্রম করতেন।

তাদের সংগঠনটি চি ওমেগা নামে পরিচিত। তারা সবাই একটি প্রাসাদসম বাড়িতে একত্রিত হতেন।

"এটি একটি বড় বাড়ি ছিল। আমাদের একটি খাওয়ার কক্ষ ছিল, একটি বসার ঘর ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি বিশাল ঘর ছিল যেখানে বড় একটা সোফা ও টেলিভিশন ছিল,” তিনি বর্ণনা করেন।

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (5)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

হলরুমে সুন্দর একটি খোদাই করা কাঠের সিঁড়ি ছিল। এই সিঁড়ি একটি হলওয়ের দিকে গিয়েছিল, যেখানে প্রায় ৩০টি শয়নকক্ষ ছিল।

ক্যাথির শয়নক্ষে তার সাথে সংগঠনের একজন সদস্য থাকতেন। তাদের ঘরের জানালা দিয়ে বাড়িটির পার্কিং-এর জায়গা দেখা যেতো। তাদের বিছানাগুলোর মাথার দিকটা পার্কিং-এর দিকে মুখ করা ছিল।

“জানালা দিয়ে যখন ঘরে সূর্যের আলো পড়তো, তখন ঘরটিকে এত সুন্দর ও উজ্জ্বল লাগতো যে আমরা আমাদের ঘরের পর্দা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাতে ঘর সর্বদা আলোকিত থাকে।"

সদর দরজায় একটি ভাঙ্গা তালা ছাড়া এটি একটি আনন্দময়, উষ্ণ ও নিরাপদ জায়গা ছিল।

সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা দেশে, বিশেষ করে, পশ্চিম উপকূলের বেশ কয়েকটি প্রদেশে নারীদেরকে হত্যা করার উচ্চ হারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কারণ তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে হত্যা করা হয়। পরে জানা যায় যে নিহতদের সবাই টেড বান্ডির হত্যাকাণ্ডের শিকার।

কিন্তু ফ্লোরিডায় যে প্রশান্তি ও আনন্দের মাঝে ক্যাথি বাস করতেন, সেখান থেকে অনেক দূরে ঘটেছিল এসব হত্যাকান্ড। তার “কোনও ধারণা ছিল না যে দেশের অন্য প্রান্তে কী ঘটছে বা টেড বান্ডি কে?”

তবে তা শুধুমাত্র ১৯৭৮ সালের ১৪ই জানুয়ারি রাত পর্যন্ত।

আরো পড়তে পারেন:
  • টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতের, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ বলে ৩০ না করার আক্ষেপ

  • বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া নারী শ্রমিকদের সংখ্যা কেন কমছে?

  • কুষ্টিয়ায় লালন অনুসারী বৃদ্ধা নারীর ঘর নিয়ে আসলে কী হয়েছিলো

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (6)

ছবির উৎস, Getty Images

সেই আক্রমণ

সেই শনিবার ক্যাথি তার পরিচিত এক যুগলের বিয়েতে যোগ দিয়েছিলেন। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের পর তার মনে পড়ে যে সোমবার তার একটি ক্যালকুলাস পরীক্ষা আছে। তাই তিনি তার শয়নক্ষে ফিরে আসেন, যেখানে তার রুমমেটও লেখাপড়া করছিলেন।

লেখাপড়া শেষে তারা রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘুমাতে যান। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরে কেউ একজন ভাঙ্গা তালাটি সরিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। তার হাতে একটা মোটা কাঠের গুঁড়ি ছিল, যেটি সে বাড়িতে ঢোকার সময় খুঁজে পায়। শয়নকক্ষের তলায় ঘুরে বেড়াতে থাকে সে।

যে ঘরে মার্গারেট বোম্যান ছিলেন, ওই ব্যক্তি সেখানে প্রবেশ করে, "তাকে কাঠের গুঁড়ি দিয়ে আক্রমণ করে, তার শ্বাসরোধ করে এবং হত্যা করে," ক্যাথি বলেন।

তারপর সে লিসা লেভির ঘরে যায়, একই কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তাকে আক্রমণ করে, কামড়ায় এবং হত্যা করে। "কামড়গুলো আঙ্গুলের ছাপের মতো," ক্যাথি বলেন। এই দাঁতের চিহ্নগুলো পরে খুনীকে শনাক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

কিন্তু হামলাকারীর কাজ শেষ হয়নি। সে হলওয়ে পেরিয়ে সে ঘরে প্রবেশ করে, যেখানে ক্যাথি ও তার রুমমেট কিছু টের না পেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। তবে কার্পেটের সাথে দরজা ঘষা লাগার শব্দে ক্যাথির ঘুম ভেঙে যায়।

“আমি উঠে বসলাম ও খুঁজছিলাম। আমি জানি না এটা কী, কিন্তু আমি একটু গাঢ় কালো অবয়ব দেখলাম, আমার বিছানার ঠিক পাশেই একজনের ছায়া। সে তার হাত মাথার উপরে তুলেছিল এবং তার হাতে কাঠের গুঁড়ি ছিল,” ক্যাথি স্মরণ করেন।

"এটি সেই একই গুঁড়ি, যা দিয়ে সে মার্গারেট ও লিসাকে হত্যা করে," এটি দিয়ে সে ক্যাথির মুখে এত জোরে আঘাত করে যে তার চোয়ালের তিনটি জায়গায় ভেঙে যায়।

এরপর লোকটি অন্য বিছানায় শুয়ে থাকা ক্যাথির রুমমেটকে আক্রমণ করার জন্য ক্যাথিকে ছেড়ে দেয়। ক্যাথি চিৎকার করার চেষ্টা করলেও তার ভাঙ্গা মুখ দিয়ে তিনি কেবল থুথু ফেলতে পারছিলেন তখন।

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (7)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

আক্রমণকারী ফের ক্যাথির দিকে আসে তাকে খুন করার জন্য। কিন্তু লোকটি যখনই কাঠের গুঁড়িটি দিয়ে আঘাত করার জন্য হাত তোলে, একটি উজ্জ্বল আলো খোলা পর্দার জানালা দিয়ে ভেতরে এসে প্রবেশ করে সমস্ত ঘরকে আলোকিত করে দেয়।

“সেটা একটি গাড়ির আলো ছিল। গাড়িটি সংগঠনের কোনও একজন মেয়েকে পৌঁছে দিতে এসেছিল,” ক্যাথি ব্যাখ্যা করেন। তখন আক্রমণকারী মুহূর্তের জন্য দ্বিধায় পড়ে যায় এবং দৌড়ে তাদের শয়নকক্ষ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে হলের মাঝ দিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌড়ে যায় এবং সদর দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু ক্যাথির সংগঠনের অন্য সদস্যরা তাকে দেখতে পান।

এদিকে, আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও ক্যাথি কোনওভাবে উঠতে সক্ষম হন।

"আমি আমার মুখে ছুরির আঘাতের মতো অনুভব করেছি এবং আমাকে আমার চিবুক ধরে রাখতে হয়েছিলো।"

সংগঠনের অন্য সদস্যরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন এবং তাদের একজন জরুরি নম্বরে ফোন করেন।

“তারা আমাকে একটি স্ট্রেচারে বসিয়ে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়েছিলেন," ক্যাথি স্মরণ করেন। তখন আমার সম্মোহিতের মতো অনুভূতি হয়।

"আমি পুলিশের গাড়ির লাইট, ফায়ার ট্রাকের লাল বাতি, অ্যাম্বুলেন্সের লাল ও সাদা বাতি আর পুলিশের ওয়াকিটকি’র শব্দ শুনছিলাম। মনে হয়েছিল আমি যেন কোনও আনন্দ উৎসবে আছি।"

তারা ক্যাথির ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করে রক্তপাত বন্ধ করেন। তাকে সরাসরি অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে চোয়াল সেলাই করে যুক্ত করে দেয়া হয় এবং ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। এসময় তার মুখ বন্ধ ছিল। তাকে স্ট্র দিয়ে খাওয়ানো হতো।

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (8)

ছবির উৎস, Getty Images

বিচার প্রক্রিয়া

এত ভয়ঙ্কর আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও, ক্যাথি শারীরিক ও মানসিকভাবে সেরে উঠতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তবে প্রথমে তাকে ১৯৭৯ সালের জুলাইয়ে বিচারের সময় আক্রমণকারীর মুখোমুখি হতে হয়।

মার্গারেট বোম্যান ও লিসা লেভিকে হত্যা করে ক্যাথি ও তার রুমমেটকে গুরুতরভাবে আহত করার কিছুক্ষণ পর টেড বান্ডি সেন্ট্রাল ফ্লোরিডায় চলে আসেন, যেখানে তিনি ১২ বছর বয়সী স্কুল ছাত্রী কিম্বার্লি লিচকে অপহরণ করে হত্যা করেন। এ ঘটনার এক বা দুই মাস পর অবশেষে কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ক্যাথি তার উপর আক্রমণের পুরো ঘটনাটি আদালতে বলেছিলেন। বান্ডি তার পাশের টেবিলে এমন দৃষ্টিতে বসে ছিলেন যেন ‘সে তার সুযোগ পেতে চলেছে’।

যদিও ক্যাথি বান্ডিকে পুরোপুরি শনাক্ত করতে পারেননি। তবে তার ও অন্যদের সাক্ষ্য আর বিবিধ প্রমাণ খুনীকে দোষী সাব্যস্ত করতে সক্ষম হয়।

“আমার খুব ভালো লাগছিল। তারপর আমি পিছনের দরজা দিয়ে আদালত কক্ষ থেকে বের হই। তখন আমার বমি করার উপক্রম হয়।”

দু’টি হত্যা ও তিনটি হত্যা চেষ্টার জন্য টেড বান্ডিকে দোষী সাব্যস্ত করতে জুরির মাত্র সাত ঘন্টারও কম সময় লাগে। পরে তার অন্যান্য অপরাধের বিচার ও শাস্তি হয়।

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (9)

ছবির উৎস, Getty Images

বান্ডির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে প্রায় এক দশক লেগে যায়। এই সময়ের মধ্যে ক্যাথির বিয়ে হয়ে যায় ও তার ছেলের জন্ম হয়, বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তার বর্তমান স্বামী স্কটকে বিয়েও করেন ক্যাথি।

টেড বান্ডিকে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে ফ্লোরিডায় বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ক্যাথি সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলেও স্কটকে পাশে নিয়ে বাড়ি থেকেই টেলিভিশনের সংবাদ দেখেছিলেন।

"যতক্ষণ না আমি কারাগারের সামনে দিয়ে সাদা লাশবাহী গাড়িটি দেখি, ততক্ষণ আমি এটা বিশ্বাস করিনি," তিনি বলেন। "আমি কাঁদতে শুরু করলাম, এবং যে নারীদেরকে সে হত্যা করেছে আর এত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে, তাদের সবার জন্য কাঁদলাম।"

তারপর থেকে টেড বান্ডি এমন একটি মোহনীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন; বই, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্রে এমনভাবে তাকে একজন কমনীয়, বুদ্ধিমান মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে; যিনি তার জীবন নষ্ট করেছেন।

কিন্তু ক্যাথির জন্য বান্ডি কোনও মোহনীয় ব্যক্তি নয়। বরং, একজন নিঃসঙ্গ, অসুস্থ মানুষ; একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে তার করা অপরাধ তেমনটাই ইঙ্গিত দেয়। “তিনি প্রাণীদের হত্যা করেছিলেন, একই জিনিস শিশুদের সাথেও করেছিলেন। এটি স্বাভাবিক ছিল না এবং তিনি জানতেন যে এটি স্বাভাবিক নয়,” বলেন ক্যাথি।

আরো পড়তে পারেন:
  • যে ১১টি অভ্যাস মস্তিষ্কের ১২টা বাজাচ্ছে

  • মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারা হচ্ছে কীভাবে, সমস্যা কোথায়?

  • রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে বাংলাদেশিদের প্রথম পছন্দ যে দেশগুলো

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (10)

ছবির উৎস, ক্যাথি ক্লেইনার রুবিন

স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন

আর কাউকে বান্ডির আঘাতের শিকার হতে হবে না, এটা ক্যাথির জন্য স্বস্তিকর বিষয় ছিল। ক্যাথি বহু বছর ধরে তার উপর আক্রমণ সম্পর্কে নীরব ছিলেন, কারণ তিনি কেবল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন।

তিনি তার ছেলে মাইকেলের ৩৭ বছর না হওয়া পর্যন্ত তার কাছেও প্রকাশ করেননি। ক্যাথি 'রোলিং স্টোন' ম্যাগাজিনে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, সেটা পড়েই মাইকেল জানতে পেরেছিলেন এই ঘটনা সম্পর্কে।

তিনি বলেছিলেন: 'মা, এইসব সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। তুমি খুবই স্বাভাবিক।’

‘স্বাভাবিক’ শব্দটি ক্যাথিকে শান্ত করে। তার মনে হয় যে বান্ডির সাথে যা ঘটেছে, সেটা শেষ হয়ে গেছে। ক্যাথি স্বাভাবিক হতে চেয়েছিলেন, শুধুমাত্র মাইকেলের জন্য নয়, পরিবারের জন্যও।

ক্যাথি কেবল আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম খুনীর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া একজনই নন, ১২ বছর বয়সে লুপাস এবং ৩৪ বছর বয়সে স্তন ক্যান্সার থেকেও বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।

“আমি সবসময় নিজেকে বলেছি যে তোমাকে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হবে। এখন যেহেতু আমি বড় হয়ে গিয়েছি, আমি বলি যে তোমাকে খুব দ্রুত হাঁটতে হবে এবং বাধা অতিক্রম করতে হবে কারণ ভাল কিছু হতে চলেছে।"

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির হাত থেকে যেভাবে বেঁচে যান ক্যাথি - BBC News বাংলা (2024)
Top Articles
Latest Posts
Article information

Author: Geoffrey Lueilwitz

Last Updated:

Views: 5639

Rating: 5 / 5 (80 voted)

Reviews: 95% of readers found this page helpful

Author information

Name: Geoffrey Lueilwitz

Birthday: 1997-03-23

Address: 74183 Thomas Course, Port Micheal, OK 55446-1529

Phone: +13408645881558

Job: Global Representative

Hobby: Sailing, Vehicle restoration, Rowing, Ghost hunting, Scrapbooking, Rugby, Board sports

Introduction: My name is Geoffrey Lueilwitz, I am a zealous, encouraging, sparkling, enchanting, graceful, faithful, nice person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.